আমিনুর রাহমান – আপওয়ার্কে সেরা বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের একজন

aminurrahman

আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয়?

উত্তর: আমি মো. আমিনুর রহমান। লেখাপড়া করেছি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ করছি আপওয়ার্কে। পিপল-পার-আওয়ার, ফ্রিল্যান্সার.কম এবং ফাইবারেও অল্প কিছু কাজ করেছি। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে নিয়মিত কাজ করা হয় না। শুধু আপওয়ার্কেই নিয়মিত কাজ করা হয়। এবার আপওয়ার্ক বাংলাদেশ বেস্ট ফ্রিল্যান্সার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পেয়েছি।
পাশাপাশি আমি একজন লেখকও। এই পর্যন্ত আমার ৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রায় সবগুলো বইই আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং এর উপর। আমার প্রায় সবগুলো বইই রকমারি.কমে বেস্ট সেলারের লিস্টে আছে। https://www.rokomari.com/book/author/21312/
প্রথম আলোর কম্পিউটার বিভাগে অনেক বছর ধরেই লিখছি যদিও ব্যস্ততার জন্য এখন আর আগের মতো নিয়মিত লেখা হয় না তবে প্রতি বছরই একটা করে বই লেখার চেষ্টা করি।

আপনার ফ্রিল্যান্সিং-এর শুরুর গল্প টা যদি বলতেন ?

উত্তর: আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি তখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাইয়ের (জাকারিয়া – এই ফ্রিল্যান্সিং ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা) কাছে প্রথম আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং এর নাম শুনি। তখন থেকেই প্ল্যান করি লেখাপড়া শেষ করে ফ্রিল্যান্সার হবো। যখন যেখানে খুশি বসে কাজ করার স্বধিীনতা, পছন্দমত সময়ে কাজ করার স্বাধীনতা আমাকে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।
২০১০ সালের জুলাই মাসে আমি প্রথম ওডেস্কে (বর্তমান নাম আপওয়ার্ক) অ্যাকাউন্ট খুলি। তারপর সুন্দর একটি প্রোফাইল তৈরি করার দিকে মনযোগ দেই। প্রোফাইল তৈরি করার এক পর্যায়ে স্কিল টেস্ট দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। তখন অনলাইনে অনেক পড়াশোনা করে ধীরে ধীরে স্কিল টেস্ট দিতে থাকি। একটা স্কিল টেস্টে একবার ফেল করলে একমাস পর সেটা আবার দেয়া যায়। সেভাবেই দেই। কয়েকটা টেস্টে পাশ করতে কয়েক মাস লেগে গেল। তারপর মোটামুটি মানের একটা প্রোফাইল রেডি করে জবে অ্যাপ্লাই করতে থাকি। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি প্রথম ওডেস্কে কাজ পাই।
শুরুতে কাজ করতাম ঘন্টায় এক ডলার রেটে আর এখন করি ঘন্টায় পঞ্চাশ ডলার রেটে।

aminurrahmanonupwork

ফ্রিল্যান্সিং-এর প্রথম কাজ আর আপনার অনুভূতি যদি বলতেন।

উত্তর: আমি প্রথম কাজটা তখনই পাই যখন আমাকে দিয়ে আর হবে না মনে করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম।
প্রথম কাজটা পাওয়ার পর মনে হলো জীবনের লক্ষ্য পুরণ হতে চলেছে। স্বপ্নটাকে বাস্তব মনে হলো, অসম্ভবকে সম্ভব।

ফ্রিল্যান্সিং পেশাটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

উত্তর: ফ্রিল্যান্সিং অনেক রিস্কি এবং চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। তবে এই কাজের মধ্যে একটা নেশা আছে। এই নেশা যাকে একবার পায় তার ফ্রিল্যান্সার হওয়া কেউ ঠ্যাকাতে পারে না।

ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি যা করছি।

উত্তর: লেখালেখি। প্রথম আলোতে কম্পিউটার বিভাগে লিখি আর
প্রত্যাক বইমেলায় একটা করে বই লেখার চেষ্টা করি। এই পর্যন্ত আমার আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

rokomaribestsellaraminurrahman

ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে অনেকে নানান সমস্যায় পড়ে, এর থেকে সমাধান কি করে পেতে পারে? আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলুন।

উত্তর: মার্কেটপ্লেস রিলেটেড কোনো প্রবলেমে পড়লে তাদের কাস্টমার সাপোর্টে কথা বলুন। আর স্কিল রিলেটেড বা অন্য কোনো প্রবলেমে পড়লে গুগল/ইউটিউবে সার্চ করুন।
একজন এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সার আর একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার এর মধ্যে পার্থক্য হলো- এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সার যখন কোনো প্রবলেমে পড়ে তখনই গুগল/ইউটিউবে সার্চ করে আর নতুন ফ্রিল্যান্সার যখন কোনো প্রবলেমে পড়ে তখনই যাকে সামনে পায় তাকেই নক করে।

আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর ব্যাপারে আপনার Experience থেকে এখন সফলতা, আপনি কিভাবে করেছিলেন ? এবং প্রধান KEY বিষয় গুলো আমাদের বলতেন যদি

উত্তর: লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। মন থেকে কোনো কিছু চাইলে তা অবশ্যই পাওয়া যায় তবে চাওয়ার মতো করে চাইতে হবে, সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে চাইতে হবে। আপনার জীবনের লক্ষ্য কী? আপনি যদি মনে করেন আপনার লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আপনি লেগে থাকবেন তাহলে আপনি দ্রুতই লক্ষ্যে পৌছে যেতে পারবেন। চব্বিশ ঘন্টা যখন একটা জিনিস নিয়েই থাকবেন তখন দেখবেন সেটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।
একটা কথা মনে রাখবেন-

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট বিশ্বাস হৃদয়ে
হবেই হবেই দেখা দেখা হবে বিজয়ে।

 

aminurrahman-01

এই ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কি কি কারণ হতে পারে? নিজের skills আর সফলটার ব্যাপারটা কিভাবে দেখছেন ?

উত্তর: আগে মার্কেটপ্লেসগুলোতে এতোটা কম্পিটিশন ছিল না তাই মোটামুটি মানের কাজ শিখেই মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করা যেত।
আর এখন অনেক কম্পিটিশন তাই এক্সপার্ট হয়েই কাজ শুরু করতে হয়। আর স্কিল ডেভেলাপের জন্য ইউটিউবের কোনো বিকল্প নেই। অনেকে দেখা যায় ফ্রিল্যান্সিংকে পার্টটাইম হিসেবে নেয়। এখন অনেক কম্পিটিশন তাই এখন আর পার্টটাইম হিসেবে নেয়ার সুযোগ নেই। পার্টটাইম হিসেবে নিলে এখন আর বেশি দিন মার্কেটে টিকা যাবে না।
আর আপনি যদি একসাথে তিনটা মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন তাহলে অনেকটা সেইফ জোনে থাকবেন। কোনো কারনে একটা অ্যাকাউন্টে কাজ না পেলে বা সাসপেন্ড হলেও বাকি দুইটা অ্যাকাউন্ট থাকবে।

কোন ব্লগ বা সাইট আপনি বেশি অনুসরন করেন?

উত্তর: ইউটিউব আর গুগল ।

একজন Freelancer এর Portfolio Build-Up করার ব্যাপারে কিছু বলুন?

উত্তর: পোর্টফোলিও সবার জন্যই দরকার। তবে নতুনদের জন্য বেশি দরকার। নতুনরা কাজ পারে/পারবে কি না এটা পোর্টফোলিও দেখেই ক্লায়েন্ট প্রথম ধারনা করে। ক্লায়েন্টকে ইমপ্রেস করার জন্য এটা হলো প্রথম ধাপ, তবে ইনকামে চিন্তা না করে নিজের পোর্টফোলিও অনেক সুন্দর করে তৈরি করার উপর অনেক বেশি মনযোগী হতে হবে। যখন পোর্টফোলিও  ভাল হবে দেখবে কাজ আপনা-আপনিই আপনার কাছে আসছে ।

আপনার কাজ করতে করতে যখন বিরক্ত আসে তখন কি করেন?

উত্তর: ইউটিউবে ডিটেকটিভ সিরিয়াল দেখি। ক্রাইম পেট্রল আমার অনেক পছন্দ।

আপনার প্রতিদিনের কাজের রুটিন ?

উত্তর: আমি রুটিন অনুসারে চলি না। সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন উঠি। যখন যা করতে ইচ্ছা হয় তাই করি।

নতুনদের উদ্দেশ্যে আপনার বক্তব্য কি?

উত্তর: নতুনদের উদ্দেশ্যে বলছি- আপনি যদি একজন সৎ মানুষ না হন তাহলে এই সেক্টরে কখনো ভালো করতে পারবেন না এবং টিকেও থাকতে পারবেন না। দুই দিন আগে বা পরে ধরা আপনি খাবেনই। ধরা খেয়ে শেখার চেয়ে ধরা খাওয়ার আগে শেখা ভালো। সবসময় ধরা খেয়ে শেখার সুযোগ থাকে না। আর এখন অনেক কম্পিটিশন। মার্কেটপ্লেসগুলোও অনেক কড়াকড়ি। তাই সবসময় মার্কেটপ্লেসের নিয়মকানুন মেনে চলবেন।

 

সাক্ষাত্কার গ্রহনে: রাজু চীৈধুরি

সার্চ ফ্রিল্যান্সারস্টোরি

Payoneer Signup

জনপ্রিয় লেখাসমূহ

Find us on facebook

Scroll to top