ফ্রিলান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে এস.ই.ও : পর্ব-১

SEO-search-engine-optimization

এস.ই.ও কি? এটি কিভাবে কাজ করে? এস.ই.ও এর কতকগুলো মৌলিক বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিদিনই আমরা নিত্য নতুন আবিষ্কারের সাথে পরিচিত হচ্ছি। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার আমাদের জীবন প্রবাহকে করেছে গতিশীল, সুন্দর ও উপভোগ্য। বিজ্ঞানের এরকমই একটি আবিষ্কার হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ছাড়া আজকের পৃথিবীতে আমরা আমাদের একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না। তাছাড়া বৈশ্বিক অর্থনীতির অনেকটাই আজ ইন্টারনেট নির্ভর। অনলাইনে আজ পায়ের জুতা-মোজা থেকে শুরু করে মাথায় ব্যবহারের শ্যাম্পু, এমনকি বাইসাইকেলের পার্টস থেকে উড়োজাহাজ পর্যন্ত কিনতে পাওয়া যায়। আর এই ইন্টারনেট ব্যবহারকে সহজ ও গতিশীল করেছে সার্চ-ইঞ্জিন টেকনোলোজি। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ কোটি তথ্যের ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য মূহুর্তের মধ্যে খুঁজে পেতে সার্চ ইঞ্জিন রূপকথার আলাদীনের যাদুর প্রদীপের মতোই কাজ করে। বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে গুগোল, বিং, বাইডু, ইয়াহু, ডাকডাকগো বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই সার্চ ইঞ্জিন প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে পুরো পৃথিবীতে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আর এর সিংহভাগই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর নির্ভরশীল। সার্চ-ইঞ্জিন ভিত্তিক ডিজিটাল মার্কেটিং এর সর্ব বৃহৎ ক্ষেত্র হচ্ছে SEO বা  Search Engine Optimization। কোন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের অর্গানিক ট্রাফিক বৃদ্ধির মূল হাতিয়ার হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। আজকে আমরা জানবো এস.ই.ও কি, এটি কিভাবে কাজ করে এবং এস.ই.ও শিখতে হলে কি কি বিষয়ে ধারণা থাকা আবশ্যক।

এস.ই.ও কি?

বিশ্ব বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস এর তথ্যমতে, বর্তমান বিশ্বে ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে শুধুমাত্র এস.ই.ও সেক্টরে। আগামী ২০২০ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের অনেক ধনী রাষ্ট্রের জাতীয় বাজেট থেকেও অনেক গুণ বেশি। যদিও এস.ই.ও একটি ব্যাপক ও বিস্তৃত বিষয় তবুও একে এক কথায় বলতে গেলে এভাবে বলা যায়, এটি এমন কতকগুলো কৌশলগত প্রক্রিয়ার সমষ্টি যা কোনো ওয়েবসাইটটিকে সার্চ-ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় নিয়ে এসে ওয়েবসাইটির ফ্রি, অর্গানিক, এডিটরিয়াল অথবা ন্যাচারাল ট্রাফিক বৃদ্ধি করে থাকে।

ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানো কতটা জরুরি? ধরুন, আপনি অনেক টাকা ব্যয় করে একটি ব্যবসা দাঁড় করালেন, কিন্তু আপনার পণ্য কেনার মতো কোনো ক্রেতা আপনার প্রতিষ্ঠানে আসছে না। তখন অনেক টাকা লগ্নি করা সত্ত্বেও আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি কোনো লাভের আশা করতে পারবেন না। ঠিক তেমনই, লক্ষ টাকা খরচ করে ওয়েবসাইট তৈরি করে কোনো লাভ হবে না, যদি সে ওয়েবসাইটে কোনো ট্রাফিক না থাকে। আর এই মহা মূল্যবান ট্রাফিক বৃদ্ধির কাজটিই করে থাকে এস.ই.ও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন টেকনোলোজি।

learn-seo

এস.ই.ও কিভাবে কাজ করে?

সার্চ-ইঞ্জিনের র‌্যাংকিং এ কোনো ওয়েবসাইটকে নিয়ে আসতে হলে সেই সাইটে এস.ই.ও করতে হয়। এস.ই.ও একটি ওয়েবসাইটের কনটেন্ট, সাইট আর্কিটেকচার, এইচ.টি.এম.এল টাইটেল ট্যাগ, মেটা ডেস্ক্রিশন নিয়ে কাজ করে, সেই সাইটটিকে সার্চ ইঞ্জিনের র‌্যাংকিং এ নিয়ে আসে। তাছাড়া, ব্যাকলিংক বিল্ডিং, সোশ্যাল শেয়ারিং, ট্রাস্ট বিল্ডিং এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেও ওয়েবসাইটিকে সার্চ-ইঞ্জিনের র‌্যাংকে নিয়ে আসে।

প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনের নিজস্ব কিছু অ্যালগোরিদম থাকে যা নির্দিষ্ট সময় পর পর আপডেট দেয়া হয়। অ্যালগোরিদম আপডেটের সাথে সাথে সার্চ-রেজাল্ট পেজেও পরিবর্তন আসে। এতে করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এস.ই.ও টেকনিক ও কলাকৌশলেও পরিবর্তন আনতে হয়। কেউ যদি সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মৌলিক নীতিমালা বা টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস অনুসরণ না করে তবে তার ওয়েবসাইটি সার্চ ইঞ্জিন অ্যালগোরিদম কর্তৃক পেনালাইজড হতে পারে। আর যদি কোনো ওয়েবসাইট পেনালাইজড হয়ে যায় বা ব্যাকলিস্টেড হয়ে যায়, তবে সেই সাইটটিকে স্বাভাবিকভাবে আর কখনো সার্চ ইঞ্জিনের র‌্যাংকিং এ নিয়ে আসা যায় না। তাই এস.ই.ও এর কাজ নিময় নীতি মেনে আদর্শ পন্থায় করা উচিত।

এস.ই.ও শিখতে হলে কি কি বিষয়ে ধারণা থাকা আবশ্যক?

এস.ই.ও শিখতে হলে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা একান্ত আবশ্যক সেগুলো আলোচনার পূর্বে এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। এস.ই.ও প্রধানত দুই ধরণের হয়ে থাকে। যথা-

১.  অন-পেজ এস.ই.ওঃ এটি মূলত ওয়েবসাইটের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে। যেমনঃ কনটেন্ট কোয়ালিটি, কনটেন্ট-লেংথ, কি-ওয়ার্ড ডেনসিটি, টাইটেল ট্যাগ, মেটা ট্যাগ, ইমেজ ও ভিডিও অপটিমাইজেশন, স্কিমা মার্ক আপ ট্যাগ, ওয়েবপেজ লোড স্পিড, সাইটম্যাপ, ন্যাচারাল এংকর টেক্সট প্লেসিং, ইন্টার্নাল পেজ লিংকিং ইত্যাদি।

২. অফ-পেজ এস.ই.ওঃ এটি ওয়েবসাইটের বহিঃস্থ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। যেমনঃ ডোমেইন অথোরিটি ও পেজ অথোরিটি বৃদ্ধি, পেজ র‌্যাংকিং বৃদ্ধি, ট্রাস্ট ফ্লো ও সাইটেশন ফ্লো বৃদ্ধি, ব্যাক-লিংক তৈরি ইত্যাদি।

 

offpage-vs-onpage-seo

এবার জেনে নেয়া যাক, এস.ই.ও শিখতে হলে কোন কোন বিষয়গুলো সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকতে হবেঃ

১। Keyword: মানুষ যখন কোনো কিছু জানার অভিপ্রায়ে সার্চ-ইঞ্জিনে যেমন গুগোল, ইয়াহু, বিং এ যা লিখে সার্চ করে তা-ই হচ্ছে মূলত কি-ওয়ার্ড। কি-ওয়ার্ডকে টার্গেট করেই কোনো ওয়েবসাইটের জন্য এস.ই.ও করা হয় এবং সেই টার্গেট কি-ওয়ার্ডের জন্য ওয়েবসাইটটিকে সার্চ-ইঞ্জিনের র‌্যাংকিং এ নিয়ে আসা হয়।

২। SERPs: এটির পূর্ণরূপ হচ্ছে Search Engine Result Pages  এটির মধ্যেই সার্চ-ইঞ্জিনের ফলাফল প্রদর্শিত হয়ে থাকে।

৩। PageRank: এটি গুগোলের অ্যালগোরিদমের একটি অংশ যা কোনো ওয়েবপেজকে সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজে নিয়ে আসে। গুগোলের দেয়া তথ্য অনুসারে, এটি বিভিন্ন ওয়েবপেজের কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি যাচাই বাছাই করে ওয়েবপেজটির গুরুত্বানুসারে তাকে র‌্যাংকিং এ নিয়ে আসে।

৪। RankBrain: এটি গুগোলের হামিংবার্ড সার্চ অ্যালগোরিদমের একটি উপাদান যা গুগোলের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হিসেবে কাজ করে। এটি গুগোলের সার্চ রেজাল্টকে ফিল্টার করে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য ব্যবহারকারীর নিকট উপস্থাপন করে থাকে।

৫। গুগোল স্যান্ডবক্সঃ সার্চ ইঞ্জিন জগতে প্রচলিত একটি বিশ্বাস বা ধারণা রয়েছে যে, গুগোল একটি বিশেষ ফিল্টারিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে নতুন কোনো ওয়েবসাইটকে সার্চ-ইঞ্জিন-রেজাল্ট-পেজে আসতে দেয় না। আর এই ফিল্টারটির নামই হচ্ছে গুগোল স্যান্ডবক্স। এটি ফিল্টারের ন্যায় কাজ করে বলে এর নামকরণটি এরকম হয়েছে। ব্যবহারিক এস.ই.ও-তে এই প্রচলিত বিশ্বাস বা ধারণার সত্যতা পাওয়া যায়।

৬। ডোমেইন অথোরিটিঃ এটি বিশ্বখ্যাত এস.ই.ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মোজ কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি ম্যাট্রিক্স যা কোনো ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন র‌্যাংকিং স্কোর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ১ থেকে ১০০ এর মধ্যে গণনা করা হয়। সংক্ষেপে এটিকে উঅ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

৭। পেজ অথোরিটিঃ এটিও ডোমেইন অথোরিটির মতোই মোজ কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি ম্যাট্রিক্স যা কোনো ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট কোনো ওয়েবপেজের র‌্যাংকিং সক্ষমতা প্রকাশ করে। এটি শূন্য থেকে ১০০ মধ্যে হিসেব করা হয়। এটিকে সংক্ষেপে চঅ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

৮। HTML টাইটেল ট্যাগঃ কোনো ওয়েবপেজের মূল শিরোনাম লিখতে এই ট্যাগটি ব্যবহার করা হয়। এটি অন-পেজ এস.ই.ও তে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই ট্যাগটি যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো বিশেষ কি-ওয়ার্ডের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওয়েবপেজকে সার্চ-ইঞ্জিনের র‌্যাংকে নিয়ে আসা যায়।

৯। HTML মেটা ট্যাগঃ টাইটেল ট্যাগের পরেই গুরুত্বপূর্ণ একটি ট্যাগ হচ্ছে মেটা ট্যাগ। এটির মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওয়েবপেজের জন্য সংক্ষিপ্ত সারমর্ম লিখা হয়। যখন সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু সার্চ করা হয়, তখন সার্চ রেজাল্টে প্রদর্শিত ওয়েবসাইটগুলোর লিংকের অব্যাবহিত নিচে যে অল্প বর্ণনা দেয়া থাকে, তাকে মেটা ডেসক্রিপশন বলে। আর এটি লিখা হয় মেটা ট্যাগের মাধ্যমে।

১০। ব্যাকলিংকঃ কোনো একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজের সাথে অন্যকোনো ওয়েবপেজ বা ওয়েবসাইটকে যুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি হচ্ছে ব্যাকলিংক। এটি অফ-পেজ এস.ই.ও তে ব্যবহার করা হয়। কোনো ওয়েবসাইটকে সার্চ-ইঞ্জিনের রেজাল্ট-পেজের র‌্যাংকিং এ নিয়ে আসার জন্য এটিকে একটি মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সঠিক পন্থায় ও যথাযত প্ল্যানিং এর মাধ্যমে হাই-কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারলে, কোনো ওয়েবসাইটকে সহজেই সার্চ-ইঞ্জিনের র‌্যাংকিং এ নিয়ে আসা যায়।

পরবর্তী সংখ্যায় এস.ই.ও এর আরো কতকগুলো মৌলিক বিষয়াবলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

লেখক – সরদার মনসুর আহমদ
Digital Marketing Consultant & SEO Expert
– The 4 Online Group

বিঃদ্রঃ – এই লেখাটি “মাসিক কম্পিউটার জগৎ” ম্যাগাজিনের “নভেম্বর ২০১৮ ইং” সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

এস.ই.ও সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন

 

2 thoughts on “ফ্রিলান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে এস.ই.ও : পর্ব-১

  1. আমও শিধু কম্পিউটার অন এবং অফ করতে পারি।আর কিছু পারিনা।তাহলে আমার কি করা উচিত।আমার দারা কি freelancer হওয়া সম্ভব।সম্বব হলে প্রথমে কি শিখতে হবে।

    1. হা সম্ভব
      ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইনে আয় করতে হলে আপনাকে কম্পিউটারের যেকোন একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত যেকোনো একটি বিষয়ে খুবই দক্ষ থাকেন এবং সে বিষয়েই কাজ করেন। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন/ ওয়েব ডিজাইন/ এসইও/ প্রোগ্রামিং পারেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। আর না পারলে উপরের যেকোন একটি বিষয় শিখে নিতে পারেন, তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।

Comments are closed.

সার্চ ফ্রিল্যান্সারস্টোরি

Payoneer Signup

জনপ্রিয় লেখাসমূহ

Find us on facebook

Scroll to top