আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট সাসপেনশানঃ কারন ও প্রতিকার

upwork account suspend

সম্প্রতি আপওয়ার্ক কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট ব্যানড/সাসপেন্ডেড/হোল্ড হওয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে; বোঝাই যাচ্ছে আপওয়ার্ক নিরাপত্তাজনিত কারনে তাদের কন্ট্রাক্টরদের প্রতি আরোপ করা নীতিমালা আগের তুলনায় আরো কঠোরভাবে পালন করছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান আর ফিলিপাইনের বেশ কয়েকজন কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট ব্যানড হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকই ১০০০ ঘন্টারও অধিক কাজ করেছেন। আসলে আপওয়ার্ক এই সাসপেনশন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলো প্রায় ৩ বছর আগেই, যখন মার্কেটপ্লেস ওডেস্ক নামে পরিচিত ছিল।

আপওয়ার্কের এত কঠোরতার কারনঃ

সম্প্রতি আপওয়ার্ক বাংলাদেশের কয়েকজন হাই প্রোফাইলড কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে। আপওয়ার্ক কোন কারন ছাড়া নিশ্চয়ই এত ভালো কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করবে না। অনেকই দোষ দিচ্ছেন আপওয়ার্ককে, কিন্তু তা ঠিক নয়।অ্যাকাউন্ট সাসপেনশানে জন্য কন্ট্রাক্টরদের বিহেভিয়ারই বহুলাংশে দায়ী| আপওয়ার্ক টার্মস এন্ড পলিসি সম্পর্কে অজ্ঞতা অথবা ইচ্ছাকৃত অবহেলা-ই অ্যাকাউন্ট সাসপেনশানের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে| সুতরাং নিরাপত্তা ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই ক্ষেত্রবিশেষে তাদের নিবন্ধিত কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট ব্যানড/সাসপেন্ডেড/হোল্ড করে থাকে।

অ্যাকাউন্ট সাসপেনশানের কারন ও প্রতিকারঃ

আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট কারন রয়েছে| আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নিম্নোক্ত বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, ফলে অনাকাঙ্খিত অ্যাকাউন্ট ব্যানিং/সাসপেনশন/হোল্ড্স থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে|
ক) এক পিসি থেকে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলাঃ একই পিসি বা আইপি থেকে একাধিক আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট তৈরী করা আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট ব্যানড হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ভেবে দেখুন যারা প্রফেশনাল, তারা নিজের কাজ করে নিজের পিসিতেই এবং প্রফেশনালরা কখনই নিজের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিজের পিসি থেকে অন্যথা ব্যবহার করবে না।
আবার নিজের আইপি থেকে অন্য আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্টধারীর অ্যাকাউন্টেও লগ-ইন করা যাবেনা, ক্লায়েন্টের অ্যাকাউন্টেতো (যেকোনো প্রয়োজনে, এমনকি ক্লায়েন্ট চাইলেও) নয়-ই|
খ) অন্যের প্রোফাইল নকল করাঃ একজন ভালো মানুষ হিসেবে আপনি অবশ্যই অন্য একজন মানুষের কোন জিনিস নকল করতে চাইবেন না। আপনি অন্য কাউকে অনুসরণ করতে পারেন মাত্র, অনুকরণ নয়। কিন্তু হায় অনেক বাংলাদেশি কনট্রাক্টর বড় বড় প্রোফাইলড কনট্রাক্টরদের আপওয়ার্ক প্রোফাইল পুরোপুরি নকল করে ফেলেন। কোন সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরে একই ধরনের কোন উত্তর যখন কোন শিক্ষক পান তখন তিনি নিজেই বুঝে নেন, এখানে কোন ঘাপলা আছে। তেমনি আপনি যখন কোন কনট্রাক্টর-এর প্রোফাইল এ রাখা কনটেন্টগুলো নিজের প্রোফাইলে রাখবেন সেগুলো কোন না কোন সময় কারো না কারো চোখে পড়বে।পাশাপাশি আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি সনাক্ত করতে পারে। আর এই রকম পেলে অব্যশই ব্যবস্থা নিবে আপওয়ার্ক।
গ) পোর্টফোলিও আইটেম চুরিঃ পোর্টফলিও বলতে আমরা বুঝি আগে করা কাজগুলোর আর্কাইভ। আপনি যদি কারো আইটেম চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দেন সেটা ঘৃন্য অপরাধ। অনেক নতুন কনট্রাক্টরদের দেখলাম ভালো মানের আইটেম অন্য কোন কনট্রাক্টর এর প্রোফাইল থেলে চুরি করে নিজেরটায় বসিয়ে দেন। উদাহরণস্বরূপ যখন কেউ আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট খুলে তখন তাকে ১০০ ভাগ প্রোফাইল কমপ্লিট করতে বলা হয়। নতুন কনট্রাক্টরদের প্রোফাইল ১০০ ভাগ পূর্ন করার জন্য অন্যের আইটেম চুরি করতে দেখা যায়। উপদেশ হল এ রকম না করে নিজে কোন ডেমো কাজ করে অন্তত নিজের একটাই দিন। অন্যেরটা দেয়া মানে আপনি কাজ জানেন না, জানলে নিজে না করে চুরি করবেন কেনো?
ঘ) কাভার লেটার স্পামিংঃ আমাদের মধ্যে এক ধরনের অলসপ্রবণতা কাজ করে; আবার সেটা ইংরেজি ভাষায় দূর্বলতার জন্যও হতে পারে। বলাবাহুল্য, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এর কাজ করতে ইংরেজীতে পারদর্শী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত প্রজেক্টের চাহিদা বুঝা এবং সে অনুযায়ী ক্লায়েন্টের সাথে সাবলীলভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট ব্যানড হওয়ার অন্যতম কারণ কাভার লেটার স্প্যামিং, যাকে সোজা বাংলায় কপি-পেস্ট বলে। নিচে এ নিয়ে একটু বিস্তারিত লিখলামঃ
• প্রত্যেকটা জব পোষ্টে ক্লায়েন্ট যেমন ভিন্ন থাকে তেমন তাদের রিকোয়ারমেন্টও আলাদা থাকে। অনেকে ব্লগে বা অন্য কোথাও পড়ে অথবা নিজেই নির্দিষ্ট একটা কাভার লেটার বানিয়ে রাখেন। মনে মনে ভাবেন বার বার এত কষ্ট করার কি আছে? একটাই দিলাম সব জায়গায়। এটা এক ধরনের মূর্খামি! প্রত্যেকটা প্রশ্নের যেমন আলাদা উত্তর থাকবে তেমনি প্রতিটা জবের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী কাভার লেটারও ভিন্ন হবে।

• বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইটে আপনি অনেক আইডিয়া পাবেন কাভার লেটার নিয়ে, স্যাম্পলও পাওয়া যাবে। আপনি সেগুলো দেখে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী নিজেরটা তৈরি করে নিবেন। ভুলেও সেগুলো কপি করে চালিয়ে দিবেন না। কাজতো পাবেনই না বরঞ্চ খারাপ ক্লায়েন্ট হলে আপনার নামে নালিশ করে দিবে আপওয়ার্ক-এর কাছে।

সাধারনত কাভার লেটার যেমন হয়ে থাকে-
Hi/Dear + ক্লায়েন্ট এর নাম/Hiring Manager,
আপনার সম্পর্কে কিছু আর জবের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু প্রশ্ন
শেষে আপনার নাম, যেমনঃ
Best Regards
Sumon

ঙ) কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ারঃ আপওয়ার্ক পলিসিতেই দেয়া আছে মার্কেটপ্লেসে কোন ধরনের কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার করা যাবে না। শুধুমাত্র আপওয়ার্ক ম্যাসাজিং এর মাধ্যমে সব কিছু ম্যানেজ করা। কিন্তু অনেক ক্লায়েন্ট জব পোষ্টে বলে দেয় স্কাইপ আইডি দিতে। সাধারনত তারা পুরো পলিসি না বুঝেই জবটা পোস্ট করে থাকে। আবার কিছু দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় স্কাইপের মাধ্যমে যোগাযোগ ছাড়া জব এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনি ইহা সুকৌশলে এড়িয়ে যান। ক্লায়েন্টকে বলুন আপনার স্কাইপ আইডি আছে কিন্তু আপওয়ার্ক পলিসি কোন কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার করতে বলে না। সে যদি চায় তাহলে আপনি দিতে পারনে কিন্তু তা ম্যাসেজ-এ দিবেন এবং যত ফিন্যান্সিয়াল ডিল হবে তা ১০০ ভাগ আপওয়ার্কে অন্য কোথাও নয়। যদি ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড হয় তাহলে সে নিশ্চিত ভাবে আপনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। এই পদ্ধতিতে সাপও মরবে লাঠিও ভাংগবে না। আপওয়ার্ক এই কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার করার জন্য আপনাকে জবাবদিহি করতে বললে তখন আপনি বলবেন ক্লায়েন্টের যোগাযোগের সুবিধার্থেই আপনি তাকে কন্টাক্ট ইনফরমেশন দিয়েছেন এবং যত কিছুই লেনদেন হয়েছে তা আপওয়ার্কের বাইরে নয়।
চ) মাত্রারিক্ত ম্যানুয়াল আওয়ার যোগ করাঃ আপনার ক্লায়েন্ট নতুন অথবা কাজ দেয়ার পর কোন কারনে Hourly Limit সেট করে নাই, আপনি সেই সুযোগের ফায়দা উঠালেন। ট্র্যাকার দ্বারা কাজের সময় গুলো ট্র্যাক না করে নিজের ইচ্ছা মত বসিয়ে দিলেন Manual Hour অ্যাড এর মাধ্যমে। সপ্তাহ শেষে ক্লায়ন্টের কাছে মেইল গেল আপনার সুকর্মের। সব ক্লায়েন্টই আপওয়ার্ক-সাপোর্ট নামে একটা জিনিষ আছে সেটা জানে, তারা ভদ্রভাবে দিল টিকেট ওপেন করে। ডিস্পুট করলে হয়ত আপনার রিফান্ড করার অপশন থাকত কিন্তু এই অসাধু কাজের ফলে আপওয়ার্ক বুঝবে তার মান সম্মান আপনি নষ্ট করছেন। আর শুরু হবে আপনার উপর গজব।
আপনি ম্যানুয়ালি করা কাজগুলোর বিল তখনই যোগ করতে পারবেন যখন আপনার ক্লায়েন্টের সাথে আপনার মধুর সম্পর্ক থাকবে।
ছ) বায়ারের সঙ্গে বাকবিতন্ডা করাঃ বায়ার যদি আপনার সাথে কোন রকম ভেজাল বা ঝগড়া করে তাহলে নিজে আ্যকশনে যাবার কোন দরকার নেই। বায়ারের সাথে কোন রকম বাকবিতন্ডা করবেন না। কারণ বায়ারের নেগেটিভ কমপ্লিমেন্ট আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে আপনি বায়ারের সকল উল্টা পাল্টা কর্মকান্ডের স্ক্রীনশট, তথ্য-প্রমানাদি সংরক্ষন করুন এবং ঠান্ডা মাথায় আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিন।

অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট সাসপেনশনঃ

বায়ারদের অ্যাকাউন্ট সাসপেনশনঃ

একই সাথে যাদের কন্ট্রাক্টর ও ক্লায়েন্ট অ্যাকাউন্ট আছে তাদের যেকোন একটি অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হলে অন্যটিও হবে।
বায়ার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড না হতে নিচের টিপসগুলো মেনে চলুনঃ
• আপনারা আপনাদের নিজস্ব কোন টিম মেম্বারকে হায়ার করবেন না। যদি এজেন্সি হয়ে থাকে।
• ভুয়া পেপাল আইডি পেমেন্ট মেথড হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট সাসপেনশনঃ

বায়ারদের কার্ড অথবা অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলে কাজ হোল্ড হয়ে যায় এবং কার্ড এ টাকা লোড হওয়া মাত্রই সব কিছু আগের মত ঠিক হয়।
কনট্রাক্টরদের ক্ষেত্রে কোন অনগোয়িং জবে ক্লায়েন্ট এর সাথে যোগাযোগ না রাখলে অথবা কায়েন্ট এর ম্যাসাজের উত্তর না দিলে যদি ক্লায়েন্ট সার্পোর্ট সেন্টারে জানায় তাহলে আপওয়ার্ক টিম কনট্রাক্টর এর ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে কিছু দিনের জন্য। যা সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ ও কারন দর্শানোর পর তুলে নেয়া হয়।

পরিসংহারঃ

সবশেষে, একজন প্রোফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কিভাবে কাজ করবেন তার জন্য কিছু টিপস যা হয়ত আপনার কাজে লাগবে অনেক। শুধু আপওয়ার্ক নয় অন্য যেকোন মার্কেটপ্লেসের জন্য আপনি এই টিপস গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
• সম্পূর্ণ কাজকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করুন এবং প্রতিটি ধাপ শেষ হবার পর পর ক্লায়েন্টকে দেখান।
• ডেডলাইন সময় শেষ হবার পূর্বেই সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করুন এবং ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দিন।
• ক্লায়েন্টের কাছে কাজ পাঠানোর পূর্বে ভাল করে রিকোয়ারমেন্ট আরেকবার দেখে নিন এবং সম্পূর্ণ কাজ ভাল করে পরীক্ষা করুন।
• কাজে এবং কথাবার্তায় সবসময় সৎ থাকতে হবে। কখনও ভুল তথ্য প্রদান করা যাবে না। কোন কারনে কাজ করতে না পারলে বিষয়টি ক্লায়েন্টকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন, বেশিভাগ ক্ষেত্রেই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা পাওয়া যায়।
• সব সময় চেষ্টা করবেন যাতে কাজ শেষে সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া যায়। ভাল রেটিং পেলে পরবর্তী কাজগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়।
• ভাল রেটিং পাবার উপায় হচ্ছে – সঠিকভাবে কাজটি করা, সময়মত কাজটি শেষ করা, ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।
• রেটিং দেবার পূর্বে ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করে নিন যে সে আপনার কাজে সম্পূর্ণ খুশি কিনা এবং আপনাকে সর্বোচ্চ রেটিং দিতে যাচ্ছে কিনা।

সার্চ ফ্রিল্যান্সারস্টোরি

Payoneer Signup

জনপ্রিয় লেখাসমূহ

Find us on facebook

Scroll to top