সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

Jinnatul Hasan

যারা আউটসোর্সিং এর সাথে জড়িত তারা নিশ্চয়ই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO শব্দটার সাথে পরিচিত। বিভিন্ন আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসে প্রতিদিনই এধরনের কাজ পাওয়া যায়। বাংলাদেশী অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা অত্যন্ত সফলতার সাথে এ কাজগুলো করছেন। তবে অনেকের কাছে বিষয়টি প্রায়সময়ই বোধগম্য হয় না, ফলে আগ্রহ থাকার পরও কিভাবে শুরু করতে হবে তা বুঝে উঠতে পারেন না। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন একটি বিশাল ক্ষেত্র, এর সাথে অনেক ধরনের বিষয় জড়িত। এস.ই.ও কাজের খুটিনাটি নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজকে রয়েছে বিষয়টির উপর একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা এবং এধরনের কাজের সাথে জড়িত একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের সাক্ষ্যাৎকার।

সার্চ ইঞ্জিন:
প্রথমেই দেখা যাক সার্চ ইঞ্জিন বলতে কি বুঝায়। সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন তথ্যকে তার নিজের ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করে রাখে এবং পরবর্তীতে ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুসারে ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো একধরনের রোবট প্রোগ্রামের সাহায্যে নিরলসভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য সংরক্ষণ করতে থাকে যা ইন্ডেক্সিং (Indexing) নামে পরিচিত। উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গুগল (৯১%), তার পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইয়াহু (৪%) এবং মাইক্রোসফটের বিং (৩%)।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন:
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) হচ্ছে এমন এক ধরনের পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা, যাতে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের সার্চ রেজাল্টে ওয়েবসাইটি অন্য সাইটকে পেছনে ফেলে সবার আগে প্রদর্শিত হতে পারে। এই ধরনের সার্চ রেজাল্টকে Organic বা Natural সার্চ রেজাল্ট বলা হয়। সার্চ রেজাল্টের প্রথম পৃষ্ঠায় দশটি ওয়েবসাইটের মধ্যে নিজের ওয়েবসাইটকে নিয়ে আসাই সবার লক্ষ্য থাকে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় ব্যবহারকারীরা সাধারণত শীর্ষ দশের মধ্যে তার কাঙ্খিত ওয়েবসাইটকে না পেলে দ্বিতীয় পাতায় না গিয়ে অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করে পুনরায় সার্চ করেন। শীর্ষ দশে থাকার মানে হচ্ছে ওয়েবসাইটে বেশি সংখ্যক ভিজিটর পাওয়া আর বেশি সংখ্যক ভিজিটর মানে হচ্ছে বেশি আয় করা। এজন্য সবাই মরিয়া হয়ে নিজের ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য উপযুক্ত করে তুলেন।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের সাথে অনেক বিষয় জড়িত। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ‌এক্ষেত্রে প্রথমেই সাইটের জন্য এক বা একাধিক নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড (Keyword) বা শব্দগুচ্ছ বাছাই করতে হয়। কিওয়ার্ড বাছাই করার পূর্বে সময় নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। এমন একটি কিওয়ার্ড বাছাই করতে হয় যাতে এর প্রতিদ্বন্ধী কম থাকে। ধরা যাক অনলাইনে গেম খেলার একটি সাইটের জন্য যদি “Play Online Game” কিওয়ার্ড বাছাই করা হয়, তাহলে এই শব্দ দিয়ে গুগলে সার্চ করলে ১.৬ কোটি সাইটের ফলাফল হাজির হবে। তাদের মধ্যে হাজারও জনপ্রিয় সাইট পাওয়া যাবে যেগুলোকে অতিক্রম করে প্রথম পাতায় আসাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কিওয়ার্ডের সাথে আরো কয়েকটি শব্দ যদি যোগ করা যায় তাহলে দেখা যাবে প্রতিদ্বন্ধী ওয়েবসাইটের সংখ্যা কমে আসবে। কিওয়ার্ড নিয়ে গবেষণার জন্য সবচেয়ে ভাল হচ্ছে গুগল এডওয়ার্ডের কিওয়ার্ড টুলটি – https://adwords.google.co.uk/select/KeywordToolExternal

অন পেজ অপটিমাইজেশন:
সাইটের জন্য সঠিক কিওয়ার্ড বাছাইয়ের পর এর বিভিন্ন অংশে এই কিওয়ার্ডটির প্রতিফলন থাকতে হয়। প্রথমত ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামে যদি বাছাইকৃত কিওয়ার্ডটি থাকে তাহলে সবচেয়ে ভাল। দ্বিতীয়ত HTML এর title ট্যাগে কিওয়ার্ড থাকা উচিত। সাইটের title ট্যাগটি ঠিকভাবে সাজানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অংশটি একজন ব্যবহারকারী এবং সার্চ ইঞ্জিনকে সেই পৃষ্ঠায় কি তথ্য রয়েছে তা নির্দেশ করে। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওয়েবসাইটের “description” meta ট্যাগ। এর মাধ্যমে ওই পৃষ্ঠার সারমর্ম লেখা হয়, যা সার্চ ইঞ্জিনকে সঠিকভাবে সেই পৃষ্ঠা ইন্ডেক্সিং এ সহায়তা করে। এই ধরনের পদ্ধতিকে On Page Optimization বলা হয়, যা নিয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

পেজরেংক:
PageRank বা সংক্ষেপে PR হচ্ছে গুগল কর্তৃক ব্যবহৃত এক ধরনের লিংক এনালাইসিস এলগরিদম, যা দ্বারা একটি ওয়েবসাইট কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা হয় এবং সার্চের ফলাফলে এটিকে প্রধান্য দেয়া হয়। গুগলের কাছে যে ওয়েবসাইট যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার পেজরেংক তত বেশি হয়ে থাকে এবং সার্চের ফলাফলে সেটি তত সামনের দিকে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সর্বোচ্চ পেজরেংক হচ্ছে ১০ এবং সর্বনিম্ন পেজরেংক হচ্ছে ০। গুগল টুলবারের সাহায্যে একটি সাইটের পেজরেংক জানা যায়। টুলবারটি এই সাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে – http://toolbar.google.com।

ব্যাকলিংক:
ব্যাকলিংক (BackLink) লিংক হচ্ছে একটি সাইটের পেজরেংক বাড়ানোর মূল হাতিয়ার। একটি ওয়েবসাইটের কোন পৃষ্ঠায় যদি অন্য একটি সাইটের লিংক থাকে তাহলে দ্বিতীয় সাইটের জন্য এই লিংককে বলা হয় ব্যাকলিংক বা ইনকামিং লিংক। আর প্রথম সাইটের জন্য এই লিংকটি হচ্ছে আউটগোয়িং লিংক, অর্থাৎ এই লিংকে ক্লিক করে ব্যবহারকারী দ্বিতীয় সাইটে চলে যাবে। এইভাবে একটি ওয়েবসাইটের যত বেশি ব্যাকলিংক থাকবে সেই ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারী আসার প্রবণতা বেড়ে যাবে। পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনের রোবট প্রোগ্রাম সেই সাইটকে খুব সহজেই খুজে পাবে। ব্যাকলিংক বাড়ানোর অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদ্ধতি হচ্ছে,

  • লিংক বিনিময়: এটি হচ্ছে ভাল পেজরেংকের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাথে নিজের ওয়েবসইটের লিংক বিনিময়, অর্থাৎ অন্য ওয়েবসাইটের লিংক নিজের সাইটে যোগ করা এবং সেই সাইটে নিজের ওয়েবসাইটের লিংক যোগ করানো। এজন্য সাধারণত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের এডমিনিস্ট্রেটরের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে লিংক বিনিময়ের প্রস্তাব জানানো হয়। আবার লিংক আদান প্রদানের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে লিংক বিনিময়ে আগ্রহী ওয়েবসাইটের ঠিকানা পাওয়া যায়।
  • ফোরামে পোস্ট করা: এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি ভাল পেজরেংকের ফোরামের Signature এ নিজের ওয়েবসাইটের লিংক যোগ করতে হয়। তারপর সেই ফোরামে নতুন কোন পোস্ট করলে বা অন্যের পোস্টে মন্তব্য দিলে লিংকটি সেই পৃষ্ঠায় প্রদর্শিত হয়।
  • আর্টিকেল জমা দেয়া: ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে নিজের সাইটের কোন লেখা সেই সাইটগুলোতে জমা দেয়া যায় এবং সেই লেখার মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে নিজের সাইটের লিংক দিয়ে ব্যাকলিংক বাড়ানো যায়।
  • ডাইরেক্টরীতে জমা দেয়া: বিভিন্ন ওয়েব ডাইরেক্টরী রয়েছে যেখানে বিনামূল্যে নিজের সাইটের তথ্য এবং লিংক জমা দেয়া যায়।
  • অন্যের ব্লগে মন্তব্য দেয়া: অন্যের ব্লগে মন্তব্য দিয়ে এবং সাথে নিজের সাইটের লিংক যুক্ত করেও ব্যাকলিংক বাড়ানো যায়।

আয়ের উপায়:
SEO এর মাধ্যমে আয়ের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আপনি যদি নিজের সাইটের জন্য SEO করে থাকেন এবং এর মাধ্যমে সাইটে অধিক সংখ্যক ভিজিটর নিয়ে আসতে পারেন তাহলে নিঃসন্দেহে সাইটটি থেকে যেকোন ধরনের সার্ভিস বা পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। অনেকে আবার বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেন। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে Google Adsense এর মাধ্যমে। সাইটের মধ্যে গুগল এডস্যান্সের কোড যোগ করলে এটি ওয়েবসাইটের তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন দেখায়। সেই বিজ্ঞাপনে কোন ভিজিটর ক্লিক করলে সাইটির মালিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করেন। পরবর্তীতে চেকের মাধ্যমে সেই অর্থ তার কাছে পাঠানো হয়। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতেও SEO ভিত্তিক নানা কাজ পাওয়া যায়। কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে কিওয়ার্ড রিসার্চ, ব্যাকলিংক জোগাড় করা, অন পেজ অপটিমাইজেশন, কন্টেন্ট লেখা, এসইও কনসালটেন্ট ইত্যাদি।


SEO শেখার ওয়েবসাইট:

SEO শেখার জন্য ইন্টারনেটে ইংরেজীতে অসংখ্য ওয়েবসাইট রয়েছে। বাংলায়ও অনেকে বিভিন্ন ব্লগ এবং ফোরামে SEO নিয়ে লিখে থাকেন। এরমধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সাইট হচ্ছে জিন্নাত উল হাসান নামে একজন সফল ওয়েবমাস্টারের ব্লগ। সাইটের ঠিকানা হচ্ছে http://bn.jinnatulhasan.com। সাইটটিতে সার্চ ইঞ্জিন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ইন্টারনেট থেকে আয়ের কৌশল নিয়ে বিভিন্ন লেখা রয়েছে। এই সাইটে জিন্নাত উল হাসানের সাথে আরো কয়েকজন অতিথি লেখক নিয়মিতভাবে এসইও এবং আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে লিখে চলেছেন।

জিন্নাত উল হাসানের জন্ম নীলফামারী জেলায়। বাবা সরকারী চাকুরিজীবি, মা গৃহিনী, ছোট ভাইবোন দুজনই ডাক্তার। রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি এবং ঢাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি পাস করেছেন। এরপর ২০০৫ সালে লন্ডন এসেছেন এবং লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে লন্ডনেই একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে এসইও কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং এবং ফটোগ্রাফির সাথে যুক্ত রয়েছেন।

যোগাযোগ করেছিলাম জিন্নাত উল হাসানে সাথে, তিনি জানিয়েছেন তার সাফল্য এবং এসইও কাজ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা।

জাকারিয়া: আপনি সাধারণত কোন ধরনের কাজ করে থাকেন?
হাসান: আমি মূলত এসইও, ব্লগিং, ওয়ার্ডপ্রেস এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করি। এছাড়া আমি অন্যদের ব্লগিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

জাকারিয়া: আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার সম্পর্কে বলুন?
হাসান: ঢাকায় ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনার সময় থেকেই একটি সফটওয়ার প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলাম, পড়াশুনা শেষে সেখানে যোগদান করি লন্ডনে আসার পর এখানে প্রথমে ওয়েব ডেভেলপার এবং পরে এসইও কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছি। আমার কিছু ক্লায়েন্ট আছে যারা অনেক দিন থেকেই আমার সাথে যুক্ত। মূলত তাদের মাধ্যমেই নতুন নতুন ক্লায়েন্ট পাই। যেসব কাজ আমার নিজের পক্ষে করা সম্ভব সেগুলো নিজেই করি আর বাকিগুলো বাংলাদেশে আমার ব্লগের পাঠক যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে জড়িত তাদের কিংবা আমার বন্ধু প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেই।

জাকারিয়া: এসইও এর মাধ্যমে একটি সাইটকে জনপ্রি করা এবং এটি থেকে আ করা অনেক সমের ব্যাপার, সেক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা কি?
হাসান: কোনো একটি সাইটকে এসইও এর মাধ্যমে দুইভাবে জনপ্রিয় করা সম্ভব। একটিকে বলা হয় Organic SEO এবং অন্যদিকে বলা হয় Paid SEO। অর্গানিক এসইও করতে খরচ কম কিন্তু অধিক সময় লাগে। অন্যদিকে পেইড এসইওতে মুহুর্তের মধ্যে সাইটকে সবার আগে নেয়া সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লিকের জন্য সার্চ ইঞ্জিনকে টাকা দিতে হয়। একারনে পেইড এসইওতে বড় বাজেট প্রয়োজন।

ওয়েবসাইট কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধরন দেখে এসইও এর ধরন ঠিক করা হয়। ব্লগ কিংবা এধরনের সাইটগুলোর জন্য অর্গানিক এসইও ব্যবহার করা হয় কারন এতে ব্যবসায়িক লাভের পরিমান কম। অন্যদিকে ই-কমার্স সাইটের ব্যবসায় প্রচুর প্রতিযোগিতা এবং ব্যবসায়ে লাভের পরিমানও বেশি। তাই এক্ষেত্রে অর্গানিক এসইও করে লাভ নেই, কারন এজন্য ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ২/৩ মাস অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে পেইড এসইও করে মুহুর্তেই প্রথমে গিয়ে কাস্টমার পাওয়া সম্ভব। ফলে ব্যবসার লাভ থেকে পেইড এসইও এর জন্য বাজেটও বের হয়ে আসে।

আমি যখনই কোনো ক্লায়েন্টের সাইটকে জনপ্রিয় করার জন্য প্রজেক্ট হাতে নেই, তখনই তাদেরকে দুই ধরনের এসইও সম্পর্কে ধারনা দেই। পরার্তীতে আমাদের দু’পক্ষের মতামত নিয়ে এসইও এর ধরন ঠিক করি। অর্গানিক এসইও এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই মাস সময় নিয়ে কাজ শুরু করি।

জাকারিয়া: এসইও কাজ করার জন্য কি কি জানতে হয় এবং এক্ষেত্রে কোন ধরনের যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন?
হাসান: এসইও করার জন্য প্রথমে কিছুটা হলেও ওয়েবসাইট ডিজাইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কোন সাইটটি ভিজিটরদের জন্য সুবিধাজনক আর কোনটি সার্চ ইঞ্জিনের জন্য ভাল সেটা বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। এরপর সার্চ ইঞ্জিনগুলো সম্বন্ধে ধারনা থাকতে হবে। একেকটি সার্চ ইঞ্জিন একেকভাবে কাজ করে। তাই সার্চ ইঞ্জিন ভেদে এসইও এর ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো খুব দ্রুত তাদের এলগরিদম পরিবর্তন করছে। এসইও এর পদ্ধতিগুলোও আয়ত্ত্বে আনতে হবে। Keyword reserach, Keyword Tools, প্রতিদ্বন্ধীদের SEO campaign ইত্যাদি নানান বিষয়ে গবেষণা করতে হয়।

এসইও করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই। নিজের চেষ্টায় যেকেউ এই বিষয়টি শিখতে পারে, যেমন আমি শিখেছি এবং জীবিকা হিসেবে গ্রহন করেছি। এজন্য আমি অন্য এসইও কন্সাল্টেন্টদের ব্লগ পড়েছি, এসইও ফোরামগুলোয় অংশগ্রহণ করেছি, এসইও ইভেন্টে যোগ দিয়েছি, বেশ কিছু বইও পড়েছি। দু:খজনক হলেও সত্য যে বাংলা ভাষায় এই বিষয় তেমন কোনো বই আমার চোখে পড়েনি। এসইও শিখতে ইন্টারনেটে থাকা তথ্যই যথেষ্ট। শুধু কষ্ট করে খুঁজে নিতে হয় আর অনুশীলণন করতে হয়।

জাকারিয়া: আপনার ব্লগ সম্পর্কে বলুন।
হাসান: বিভিন্ন বিষয়ে আমার বেশ কিছু ব্লগ আছে। ব্লগগুলোতে আমি ভিন্ন ভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞাপন বসাই। এসব বিজ্ঞাপন থেকেই প্রতিমাসে আমি ৩৫, ০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা আয় করি।

তবে বাংলা ভাষায় আমার মাত্র একটি ব্লগ আছে, যেখানে আমি এসইও, ব্লগিং, ইন্টারনেটে আয়ের কৌশল নিয়ে আলোচনা করি। বাংলাভাষায় একমাত্র আমার ব্লগটিই বোধহয় ধারাবাহিকভাবে এই বিষয়গুলোতে আলোচনা করে থাকে। ইন্টারনেটে আয়ের বিষয়টি নিয়ে আমাদের সবার মাঝে অনেক ভুল ধারনা আছে; যেমন এ্যাডে ক্লিক করে হাজার হাজার টাকা কামানো যায় কিংবা সার্ভে করে কোটিপতি হওয়া যায়। এই ধরনের কোনো উপায়ে টাকা আয় করা সম্ভব নয়, এতে অহেতুক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। বরং আউটসোর্সিং কিংবা ব্লগিং করে কিভাবে সম্মানজনকভাবে টাকা কামানো যায় সেই বিষয়ে আমি আমার ব্লগে আলোচনা করি। আমি কোনো ট্রিক বা শর্টকাট পথ শেখাই না, আমি শুধু বৈধভাবে আয়ের পথগুলো দেখিয়ে দেই। পাঠকেরা নিজেদের পথ খুঁজে নেন।

অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আমার দেখানো পথে নিজের মেধা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আমার ব্লগের পাঠকেরা প্রতিমাসে ভাল অংকের টাকা উপার্জন করছেন।

জাকারিয়া: কাজ করতে গিয়ে আপনার মজার কোন অভিজ্ঞতা কি হয়েছে?
হাসান: সাধারণত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জানে না কিভাবে সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে ব্যবহার করে কাস্টমার পেতে হয়। আবার এসইও সম্পর্কে প্রচুর ভুল ধারনা আছে। তারা মনে করেন যে এসইও কন্সালটেন্টরা বোধহয় এমনি এমনি মাসের শেষে পয়সা চায়। তাই প্রতিটি প্রজেক্ট শুরু করার আগে প্রথমেই কাস্টমারকে এই বিষয়গুলো শেখাতে হয়। অনেকটা বাচ্চাদেরকে A, B, C, D শেখানোর মতো – গুগল কি, গুগল কিভাবে কাজ করে ইত্যাদি।

জাকারিয়া: আউটসোর্সিং কাজ করতে গিয়ে কোন ধরনের অসুবিধার সম্মুখিন কি কখনও হয়েছেন?
হাসান: আমার চোখে বাংলাদেশে আউটসোর্সিং দুইটি কারনে এগিয়ে যেতে পারছে না। প্রথমটি হলো ইন্টারনেটের গতি এবং অন্যটি হলো ইন্টারনেটে আর্থিক লেনদেনের সীমাবদ্ধতা। কোরিয়াতে যেখানে ইন্টারনেটের গড় গতি ১০০ মেগাবাইট সেখানে বাংলাদেশে ইন্টারগতি এখনও কিলোবাইটে উঠানামা করে। এসইও এর কাজটি বলতে গেলে পুরোপুরি ইন্টারনেটে বসে করতে হয়। সেক্ষেত্রে ইন্টারনেটের উচ্চগতি খুবই অত্যাবশ্যকীয়। এরপরেও এদেশে প্রোগ্রামার, ফ্রিল্যান্সাররা আজ আউটসোর্সিংয়ের জগতে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করেছে।

এরপর আসে পেপাল কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের অনুপস্থিতি। খেঁটেখুটে কাজ করার পর ক্লায়েন্টদের থেকে পেমেন্ট পেতে প্রচুর ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। এমনকি ওয়েবসাইট বানানোর জন্য ডোমেইন, হোস্টিং কিনতে অন্যের উপর নিভর্র করতে হয়। সরকারের উচিত সময় নষ্ট না করে এখনই এই বিষয় দুইটিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা ।

জাকারিয়া: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো কি? টিম বা কোম্পানী গঠনের মাধ্যমে কাজ করার কি কোন পরিকল্পনা আছে?
হাসান: প্রথমত পেশাকে অর্গানিক এসইও থেকে পেইড এসইও তে পরিবর্তন করতে চাই। এছাড়াও লন্ডনে আমি আমার এক সহকর্মীর সাথে ছোট একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছি যেখানে আমরা ব্লগিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। অন্যদিকে বাংলাদেশে থাকা আমার বন্ধুর সাথে আউটসোর্সিংয়ের ব্যবসাকে আরোও বড় আকারে শুরু করতে চাই। এছাড়াও আমার বাংলা ব্লগটিকে বাংলা ভাষায় এসইও এবং ব্লগিং শেখার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই। ইতিমধ্যেই ব্লগটির প্রসারে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। সম্ভব হলে ছুটিতে বাংলাদেশে এসে এসইও এবং ব্লগিং বিষয়ে কিছু কর্মশালা আয়োজন করতে চাই।

জাকারিয়া: নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ।
হাসান: সবার প্রথমে নিজে শেখার এবং অন্যকে শেখানোর মানসিকতা থাকতে হবে। আমার ব্লগের মূলমন্ত্র হলো নিজে শিখুন, অন্যকে শেখান। এভাবে আপনার জ্ঞানও চর্চায় থাকবে অন্যদিকে অন্য যাকে শেখাচ্ছেন তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে আপনি নিজেও নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারবেন। ইন্টারনেটে প্রচুর এসইও ব্লগ, ফোরাম আছে – সেগুলোতে যোগ দিন। আলোচনায় অংশ নিন। প্রয়োজনে বোকার মতো হলেও প্রশ্ন করুন। ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অনেক সময় ভাষার অদক্ষতার কারনে ক্লায়েন্টদের সঠিক প্রয়োজন বুঝতে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।

যাদের ইন্টারনেটের গতি কম, তারা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে কিংবা প্রিন্ট করে বই আকারে পড়ুন। যতটুকু পড়ছেন, ততটুকু দিয়েই চর্চা শুরু করুন। তবে শেখার চর্চা বন্ধ করবেন না। সবশেষে ধৈর্য্য হারাবেন না। লেগে থাকুন, একদিন নিশ্চিত সফলতা আপনার হাতে ধরা দেবেই।

লেখক – মোঃ জাকারিয়া চৌধুরী
বিঃদ্রঃ – এই লেখাটি “মাসিক কম্পিউটার জগৎ” ম্যাগাজিনের “মার্চ ২০১১” সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে

23 thoughts on “সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

  1. জাকারিয়া ভাইয়া আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এই রকম একটা সুন্দর লেখার জন্য । আমি হাসান ভাই এর ব্লগ এর একজন নিয়মিত পাঠক র আপনার নার টা ও ।

    ভাল থাকবেন।
    মিলন

  2. জাকারিয়া ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । হাসান ভাইয়ার ব্লগ এর কারনে আমি এথন অ্যাডসেন্স থেকে ইনকাম করতে পারছি । হাসান ভাইকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ।

  3. কাল থেকে বেশকয়েকবার আপনার ব্লগটিতে প্রবেশ করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হই, আর এরকম একটি অতি প্রয়জনীয় এবং বিশাল পোষ্ট লেখার জন্যে আপনাকে সবিশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন

  4. SEO, ব্লগিং এই সব বোরিং লাগে! আপনার লেখা পড়ে গ্রাফিক্স রিভারে কিছু কাজ সাবমিট করেছিলাম। প্রথম এর কয়টা এপ্রুভ হয় নাই কিন্তু পরের গুলো এপ্রুভ হয়েছিল। কিন্তু পরিশ্রম হিসেবে বিক্রি একেবারে কম! কোড ক্যানিয়ন এ দুইটা কাজ সাবমিট করেছি কিন্তু এপ্রুভ হয় না। আরও ভালো মানের চায়।

  5. জাকারিয়া, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি কম্পিউটার জগৎ এবং আপনার ব্লগের পাঠকেরা ইন্টারভিউটি থেকে উপকৃত হবেন।

  6. @Shamim,

    It doesn't matter which operating system you are using, unless you need to use a software that comes for a specific operating system.

    Personally I am a 99% Ubuntu user. Free OS, free softwares, no virus, no security fuss etc.

    -Hasan

  7. Bhaiia apnake onek thanks ato nice 1 ta post dewar jonno. but ami aj 4-5 month dhore Odesk a try korci bt job pasci na peleo buyer amar sample a satisfy noi,tai ami vison depressed. r jodi kono bangla blog er kotha mention korten Seo related tobe khub valo hoto.

  8. জাকারিয়া ভাই দারুন পোস্ট করছেন. ধন্যবাদ.
    আমি হাসান ভাই এর ব্লগ এর একজন নিয়মিত পাঠক. ধন্যবাদ আপনাকে.

  9. খুব ভাল লাগল পোষ্টটি পড়ে। আমি আমার ব্লগে Google Ads ব্যবহার করেছি। একন চিন্তা করলাম সিওয় ছাড়া ইনকাম করাট অনেক কষ্টকর। তাই কয়েকদিন থেকে শুধু সিও নিয়ে সার্চ করছিলাম। হাসান ভাইয়ের ব্লগের ভিজিটর আমি অবশ্য না। তবে Google সার্চের মধ্যমে কযেকবার ভিজিট করেছি। আর জাকারিয়া ভাইয়ের ব্লগটাও জানতাম তবে খুব একটা ভিজিট করতাম না। আশা করি আগামীতে নিয়মিত ভিজিট করার। আর যদি সম্ভব হয় আমাকে একটা হেল্প করবেন।

    আমি আমার চাই আমার Blogspot ব্লগে যেকেউ রেজিট্রশন করে নতুন পোস্ট করতে পারবে এমন পদ্ধতি চালু করতে। এই বিষয়ে অনেকে খুজছি কিন্তু সঠিক কোন সমাধা পাই নি। আশা করি আপনাদের কাছ থেকে পাব। ধন্যবাদ আবার।

  10. SEO নিয়ে কাজ শুরু করতে চাইলে আমাকে সবার আগে কি কি বিষয় জানতে হবে দয়া করে জানাবেন

Comments are closed.

সার্চ ফ্রিল্যান্সারস্টোরি

Payoneer Signup

জনপ্রিয় লেখাসমূহ

Find us on facebook

Scroll to top